জাতীয়

কারাগারের বাইরের জীবন এত জটিল কেন?

  অনলাইন প্রতিনিধি ২ এপ্রিল ২০২৪ , ১:৫৪:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

কারাগারের বাইরের জীবন এত জটিল কেন? জীবন এত কঠিন হবে জানলে কারাগারেই থেকে যেতাম।
কারামুক্ত জল্লাদ শাহজাহান

জল্লাদ শাহজাহান

কারামুক্ত জল্লাদ শাহজাহান বলেছেন, কারাগারের বাইরের জীবন এত জটিল কেন? জীবন এত কঠিন হবে জানলে কারাগারেই থেকে যেতাম। ৪৪ বছর কারাবন্দি থেকে বাইরে এসে নানা প্রতারণায় পড়ে মনে হচ্ছে কারাগারেই ভালো ছিলাম।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিজের জেল-পরবর্তী জীবনের অভিজ্ঞতা ও নানা প্রতারণার ঘটনা জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন তিনি। আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান বলেন, আমি জানতাম না এত প্রতারক বাংলাদেশে রয়েছে। আমি ২৩ বছর বয়সে জেলে গিয়েছি, ৪৪ বছর কারাভোগ শেষে এক অন্যরকম দেশ দেখছি। বাইরের লোকের সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল না, তারা এতটুকু নির্দয় হতে পারে আমার জানা ছিল না।

তিনি বলেন, কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে আমাকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। আর কারাগারে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন শুভাকাক্সক্ষীর কাছ থেকে আশীর্বাদ হিসেবে পাওয়া টাকাসহ মোট ১৮ লাখ টাকা আমি সাহায্য হিসেবে পাই। কিন্তু এখন আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। এখন কেউ আমাকে খাবার দিলে খাই, না দিলে না খেয়ে থাকি। আমার থাকার জায়গা নেই। ফুটপাতে, গ্যারেজে বা কেউ আশ্রয় দিলে সেখানে থাকি। আমি আমার উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপির কাছে গিয়েছি কিন্তু কেউ আমাকে এক মুঠো ভাত দেয়নি, কাজ দেয়নি, সাহায্য-সহযোগিতা করেনি। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিত্তবানদের কাছে নিজের থাকার ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, জেল থেকে বের হয়ে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সাথী আক্তার (২৩) নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করে প্রতারিত হয়েছি। ৫৩ দিনের মাথায় সে পালিয়ে গিয়ে আমার নামে যৌতুকের মামলা দিল। সে আমার জমানো টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। অথচ আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেওয়ার সময় স্ট্যাম্পে লিখিত দিয়েছে, যার সব প্রমাণ আমার হাতে রয়েছে। তার পরও আমাকে যৌতুকের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

আমি থানায় মামলা দিতে গেলেও বউয়ের নামে মামলা করা যায় না বলে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। পরে আইনজীবীর সহযোগিতায় রবিবার আদালতে আমার স্ত্রী, শাশুড়িসহ ছয়জনের নামে মামলা করেছি। আমি চরম অর্থনৈতিক সংকটে আছি। আমার কাজ করার মতো ক্ষমতা নেই, আয়-রোজগার নেই, অর্থের জোগানদাতা নেই, নিজের থাকার জায়গা নেই।

৪৪ বছর কারাভোগ শেষ করে এসে আমি এখন বাইরের মানুষকে বুঝতে পারছি না। যেখানেই যাচ্ছি প্রতারকের খপ্পরে পড়ছি। জল্লাদ শাহজাহান বলেন, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য দরকার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। কোনোটিই আমি পাচ্ছি না। আমি আমার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।

তিনি বলেন, কারাগার থেকে বের হলে আমার ভাগনে নজরুল আমাকে অটোরিকশা কিনে দেবে বলে আমার টাকা মেরে দেয়। এরপর অনেক কষ্টে একটা চায়ের দোকান দিই। আমার সঙ্গে যে ছেলেটি দোকানে সময় দিত, সে চার মাস আমার সঙ্গে থাকার পর দোকানে থাকা ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায়।

আরও খবর

                   

সম্পর্কিত